প্রচেষ্টা পাঠশালা
প্রচেষ্টা পাঠশালা
সন্ধানে নতুন কান্ডারির
একটা স্বপ্ন, একটা সংকল্প, একটা অবিরাম প্রচেষ্টা—এই তিনের সংমিশ্রণেই জন্ম প্রচেষ্টা পাঠশালা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে মাত্র ২৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথচলা শুরু হয় এই পাঠশালার। তখন নির্দিষ্ট কোনো স্থায়ী জায়গা ছিল না, ছিল না পর্যাপ্ত শিক্ষাসামগ্রী, কিন্তু ছিল কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর একনিষ্ঠ চেষ্টা, যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন—শিক্ষাই পারে সমাজের অবহেলিত শিশুদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। বর্তমানে ৭৯ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত এখানে পড়াশোনা করছে, যাদের মধ্যে রয়েছে বেদে সম্প্রদায়ের শিশু, এতিম, ভিক্ষুক, টোকাই ও হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা।
প্রচেষ্টা পাঠশালার শিক্ষার্থীরা এমন এক বাস্তবতার মধ্যে বড় হয়, যেখানে শিক্ষা যেন এক বিলাসিতা। তাদের কারো বাবা-মা নেই, কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কেউ আবার দিনের বেশিরভাগ সময় পথে কাটায় খাবারের খোঁজে। কিন্তু এই শিশুরাও স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতে কারিগর, শিক্ষক, ডাক্তার বা সমাজের জন্য কিছু করার মতো একজন মানুষ হওয়ার। প্রচেষ্টা পাঠশালা তাদের সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এখানে শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান দেওয়া হয় না, বরং নৈতিকতা, মানবিকতা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও কার্যক্রম
প্রচেষ্টা পাঠশালা বৈকালীন একটি বিনামূল্যের স্কুল, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা লাভ করতে পারে। পাঠশালায় ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষিকা কাজ করছেন, যারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের সময়, জ্ঞান ও শ্রম ব্যয় করে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াচ্ছেন। নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ পাঠশালা, অভিভাবকদের জন্য সচেতনতামূলক সভা, ধর্মীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার জন্য বই, খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ ও ইউনিফর্ম প্রদান করা হয় বিনামূল্যে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন কুইজ, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, গল্প বলার আসর এবং খেলাধুলার আয়োজন করা হয়, যাতে শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখতে পারে।
পাঠশালার প্রতিদিনের জীবন
প্রতিদিন বিকেল হলেই শিশুদের দল পাঠশালায় আসতে শুরু করে। অনেকে সকালে অন্য কাজ করে, কেউ বাড়ির কাজে সাহায্য করে, কেউবা রাস্তার পাশে ছোটখাটো কাজ করে কিছু টাকা জোগাড় করে। কিন্তু বিকেল হলেই সবাই এক হয়ে যায় এক অন্যরকম জগতে, যেখানে শিক্ষাই প্রধান, যেখানে ক্লাসের পাশাপাশি হাসি-আনন্দ আর খেলাধুলার মিশেল থাকে। পাঠশালার ক্লাসরুম মানেই শুধু বই খাতা নয়, এখানে কখনো গান শেখানো হয়, কখনো চারপাশের পৃথিবী সম্পর্কে গল্প বলা হয়, কখনো শিখিয়ে দেওয়া হয়—ভালো মানুষ হতে গেলে কী কী গুণ থাকা দরকার।
শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করেন না, তারা প্রতিটি শিশুর অভিভাবকের মতো পাশে থাকেন। শিশুরা এখানে নিজেদের কষ্ট, ভয় আর স্বপ্নের কথা বলতে পারে। কেউ হয়তো ক্লাসে এসে বলে, “স্যার, আজ দুপুরে কিছু খেতে পারিনি,” আর শিক্ষকরা চেষ্টা করেন কিছু একটা ব্যবস্থা করতে। আবার কেউ বলে, “আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো,” আর শিক্ষকরা বলে, “তাহলে আজ থেকেই তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো।”
চ্যালেঞ্জ ও সংকট
প্রচেষ্টা পাঠশালার পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। শুরুতে আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব এবং শিক্ষাসামগ্রীর সীমাবদ্ধতা ছিল অন্যতম বড় বাধা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব – পাঠশালার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই, ফলে একটি স্থায়ী শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
শিক্ষাসামগ্রীর সংকট – শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত বই, খাতা, কলম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সবসময় নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
খাবারের ব্যবস্থা – অনেক শিক্ষার্থী এমন পরিবার থেকে আসে, যেখানে দিনে দুই বেলা খাবার নিশ্চিত করা কঠিন। ফলে বিদ্যালয়ে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বৈদ্যুতিক সুবিধার অভাব – পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রচেষ্টা পাঠশালা শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে, যেখানে শিশুরা শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, বরং উচ্চশিক্ষা লাভের পথও পাবে। ভবিষ্যতে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও পাঠশালা স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে আরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার আলো পেতে পারে।
এ উদ্যোগকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সমাজের সহানুভূতিশীল মানুষদের সহযোগিতা। যে কেউ চাইলে বই, খাতা, কলম, ইউনিফর্ম, আর্থিক অনুদান কিংবা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে এই মহৎ প্রচেষ্টার অংশ হতে পারেন।
সমাজের প্রতি আহ্বান
প্রচেষ্টা পাঠশালা কেবলমাত্র কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় চালিত একটি উদ্যোগ নয়, এটি গোটা সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্য করা। একটি বই, একটি খাতা, কিংবা কিছু সময় দেওয়া—এগুলো হয়তো আমাদের কাছে তেমন কিছু মনে হবে না, কিন্তু এই শিশুগুলোর জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
এই পাঠশালা প্রমাণ করে যে, প্রচেষ্টা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব। হয়তো এটি এখনো ছোট, হয়তো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, কিন্তু একদিন এই পাঠশালার শিক্ষার্থীরাই সমাজের আলো হয়ে উঠবে। হয়তো কোনো একদিন তাদের মধ্য থেকেই কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ সমাজসেবক—আর তখন এই পাঠশালার গল্পটা শুধু ‘এক প্রচেষ্টার গল্প’ হয়ে থাকবে না, বরং এটি হয়ে উঠবে এক সফলতার গল্প, এক পরিবর্তনের গল্প!
টিচার তালিকা

Alysha Rahman
Acting Headmistress
23.January.2015

Tania Akther
Assistant teacher
23.January.2015

Tania Akther
Assistant teacher
23.January.2015

Tania Akther
Assistant teacher
23.January.2015

John Doe
Seo
23.January.2015

John Doe
Seo
23.January.2015

John Doe
Seo
23.January.2015

John Doe
Seo
23.January.2015
‘প্রচেষ্টা পাঠশালা’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম * সংশপ্তক অ্যাসোসিয়েশন এর অন্যতম একটি শাখা হলো ‘প্রচেষ্টা পাঠশালা’। শিক্ষা সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশপ্তক জ্যাসোসিয়েশন ২০১৬খ্রি. সাল থেকে সমাজের হতদরিদ্র্য এবং ঝরেপড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু কন্ট্রি ২০১৯০৮ খ্রিসার ৩০) সার্গ থেকে মাল এর অধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে (বেদের সম্প্রাদার, বিক্ষুক, টোকাই, এতিম) বিনা মূল্যে পাঠদান কুরিয়া আসছে প্রচেষ্টা পাঠশালার মাধ্যমে। এই শিশুগুলো শিক্ষা সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ২৫জন শিক্ষক/শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রচেষ্টা পাঠশালার এ সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংশপ্তক অ্যাসোসিয়েশন এর স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা হলো রামগঞ্জ উপজেলায় শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে স্মাতকত্তোর শ্রেণি পর্যন্ত হতদরিদ্র পরিবারের। যে সকল শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে প্রাইভেট ও কোচিং করতে পারেনা, তারা প্রচেষ্টা পাঠশালার মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষা সবার অধিকার নিশ্চিত করা। প্রচেষ্টা পাঠশালা সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের আধা, প্রত্যাশা এবং ভালোবাসার কেন্দ্র হিসেবে জায়গা করে নিবে। ইনশাআল্লাহ।






